অগ্রগণ্য তো বটেই, সেই সঙ্গে তিনি পাঠক-পাঠিকার সবচেয়ে অন্তরঙ্গ প্রিয় লেখক। তাঁর প্রথম উপন্যাস 'হলুদ বসন্ত' (১৯৬৭) থেকে 'চাপরাশ (১৯৯৮) এই দীর্ঘসময় ধরে তিনি সমান সমাদৃত, উপন্যাস পড়ুয়াদের অন্তর্লোকে তাঁর স্থান সুনির্দিষ্ট এবং শিল্পমানের বিচারে তিনি স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত।
বুদ্ধদেব সর্বসময়ের লেখক। কিন্তু লেখাই তাঁর জীবিকা নয়। কৃতী অ্যাকাউন্টেন্ট বুদ্ধদেবকে তাই প্রকাশনা সংস্থার চাহিদা মেটানোর জন্য দুহাতে সাধারণ মানের লেখা লিখতে হয়নি। ফলে শিল্পের দিক থেকে বা মান নির্ধারণের মাপকাঠিতে তাঁর কোনও উপন্যাস বা ছোটগল্পকে চোখ বুজে নিচু স্তরের বলে ছাপ মেরে দেওয়া যায় না। নিজস্ব রচনাশৈলীর আশ্রয়ে তিনি যেসব বহুপঠিত, বহুমুদ্রিত ও বহু আলোচিত উপন্যাস এযাবৎ লিখেছেন, সেগুলি বাংলা সাহিত্যের ধারায় একটি স্বতন্ত্র ঘরানা ও বিশিষ্ট সংযোজন। অরণ্যপ্রেমী ও অরণ্যচারী এই স্রষ্টা আত্মপ্রকাশের লগ্ন থেকেই তাঁর জয়যাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। 'হলুদ বসন্ত'-এর পর আর তাঁকে ফিরে তাকাতে হয়নি। সন্তোষকুমার ঘোষের মতে, 'নীলাঙ্গুরীয়'র পর বাংলা কথাসাহিত্যে এমনতর প্রেমের উপন্যাস খুব কমই লেখা হয়েছে। শক্তিশালী এই লেখক নরনারীর প্রেমজীবনের আন্তরচিত্র এমনভাবে এঁকেছেন যে, পাঠকদের দেখার দৃষ্টিভঙ্গিটাই বদলে গেছে। নিবিড় ভালবাসার সংরাগ তাঁর একাধিক প্রেমের উপন্যাসের পটভূমিতে সৃষ্টি করেছে রামধনুর বর্ণচ্ছটা।
আবার শুধু এ জাতীয় উপন্যাসেই নয়, প্রতীকী উপন্যাস কিংবা গোয়েন্দা উপন্যাসেও বুদ্ধদেব সিদ্ধহস্ত। তাঁর প্রতিটি উপন্যাসের পটভূমি জীবন্ত, তাঁর নিজের চোখে দেখা। অবিশ্বাস্য কল্পনা নয়। ফলে পাঠকের সঙ্গে তাঁর সংযোগ গড়ে ওঠে উপন্যাসের প্রথম শব্দ থেকেই। সেই সব বিশ্বস্ত পটভূমি পাঠকদেরই হয়ে যায়।
এই উপন্যাস সংগ্রহে গৃহীত হয়েছে লেখকের স্বনির্বাচিত দশটি নানা ধরনের কালজয়ী উপন্যাস: হলুদ বসন্ত (১৯৬৭); খেলা যখন (১৩৮১); বিন্যাস (১৯৮০); ওয়াইকিকি (১৯৮০); অন্বেষ (১৯৮৫); ভোরের আগে (১৯৮৬); সন্ধের পরে (১৯৮৭); পুজোর সময়ে (১৯৮৮); নগ্ননির্জন (১৩৯৯) এবং বাতিঘর (১৩৯৯)।
দুই মলাটের মাঝখানে দশটি উপন্যাসের এই সুচয়িত সংগ্রহ পাঠক-পাঠিকার অনেকদিনের চাহিদা পূরণ করল। প্রিয় লেখকের স্মরণীয় উপন্যাস দিয়ে সাজানো এই ডালি সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে এক বহুকাঙ্ক্ষিত উপহার।
বুদ্ধদেব গুহ একজন ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক ও সংগীতশিল্পী। তিনি ১৯৩৬ সালের ২৯ জুন কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। বন, অরণ্য ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখার মাধ্যমে পাঠকহৃদয় জয় করে নেওয়া এই লেখকের জীবন অভিজ্ঞতা ও বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে তিনি পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘জঙ্গলমহল’। রচনাশৈলীর অনন্যতা ও স্বাতন্ত্র্য তাকে বাঙালি পাঠকের অন্যতম প্রিয় লেখকে পরিণত করেছে। বুদ্ধদেব গুহ কবিতা, ছোটগল্প ও উপন্যাস রচনা করেছেন, যা তাকে খ্যাতির চূড়ায় নিয়ে গিয়েছে। তাঁর সৃষ্ট বিখ্যাত চরিত্র ঋজুদা যেন তাঁর মতোই পরিব্রাজক। সে বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় তার সঙ্গী রুদ্রকে নিয়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে আসা এই লেখক অরণ্যকে যেমন তাঁর লেখার এক মূল আধেয় হিসেবে ধরে নিয়েছেন, তেমনই তাঁর লেখাগুলোর পটভূমিও ছিল পূর্ব বাংলার গহীন অরণ্য। এর সাথে তিনি সমাজের উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জীবনযাপন তাঁর লেখনীতে তুলে ধরেছেন, যা তাকে খুব সহজেই খ্যাতির পাত্রে পরিণত করে। বুদ্ধদেব গুহ প্রেমের উপন্যাস রচনা করেছেন বেশ কয়েকটি। এর মাঝে ‘হলুদ বসন্ত’ অন্যতম। বাংলা কথাসাহিত্যে এমন রোমান্টিসিজমের সংযোজন খুব কম লেখকই করতে পেরেছেন। পাঠকনন্দিত বুদ্ধদেব গুহ এর উপন্যাস সমগ্র হলো ‘মাধুকরী’, ‘একটু উষ্ণতার জন্য’, ‘নগ্ন নির্জন’, ‘অববাহিকা’, ‘পরদেশিয়া’, ‘সবিনয় নিবেদন (পত্রোপন্যাস)’, ‘আলোকঝারি’ ইত্যাদি। ছোটদের জন্য লিখেছেন ‘ঋজুদা’ সিরিজ। তাঁর রচিত ‘মাধুকরী’ উপন্যাস একইসাথে বিতর্কিত ও তুমুল জনপ্রিয়। বুদ্ধদেব গুহ এর বই সমগ্র শুধু উপন্যাস হিসেবে নয়, নগর ও অরণ্যের স্তুতি হিসেবে পাঠকের কাছে ভালোবাসার স্থান পেয়েছে। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি একজন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট এবং একজন নামকরা সঙ্গীতশিল্পীও বটে। বুদ্ধদেব গুহ এর বই সমূহ থেকে নির্মিত হয়েছে একাধিক টিভি অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্র। ১৯৭৭ সালে তিনি আনন্দ পুরস্কার পান। তাঁর রচনার জন্য তিনি বাংলা কথাসাহিত্যে এক মাইলফলক তৈরি করেছেন।
Such an incredibly complex story! I had to buy it because there was a waiting list of 30+ at the local library for this book. Thrilled that I made the purchase
I read this book shortly after I got it and didn't just put it on my TBR shelf mainly because I saw it on Reese Witherspoon's bookclub September read. It was one of the best books I've read this year, and reminded me some of Kristen Hannah's The Great Alone.