রেণু অবাক হয়ে বলল, 'কোথায় যাবেন এখন?” বললাম, আজ ভুবনেশ্বর, তারপর অন্য কোথাও। আমি আর আশ্রমে যাবার সময় পাব না, তুমি একটু ছোট বউদিকে বলে দিও, কেমন? রেণু যেন বিশ্বাস করতে পারল না। কয়েক মুহূর্ত, তারপর হঠাৎ ওর মুখখানি হাসিতে ভরে উঠল। স্নিগ্ধ সুন্দর সেই হাসিতে চোখের জলটাও যেন একটি আনন্দের ঔজ্জ্বল্যে চকচকিয়ে উঠল। ও নত হয়ে আমার পায়ে হাত দিতে গেল। বাধা দিয়ে আমি ওর হাত ধরলাম। এই হাসিটুকুর জন্যে গভীর কৃতজ্ঞতায় আমার মন ভরে গেল। রেণু যেন আমাকে মস্তবড় একটা সাহস দিল। কিন্তু সে কথা আমি ওকে বললাম না।রেণুই আবার বলল, “চিরদিনের নিমন্ত্রণ কিন্তু রইল। শুধু এইটুকু মনে রাখলেই হবে।' আমি কথা বলতে গেলাম। রেণু বলে উঠল, 'থাক, কিছু বলতে হবে না।' মহিমবাবু এসে দাঁড়ালেন। ওঁর দেনা পাওনা সবই মেটানো হয়েছে। সঞ্জয়ের মেয়েকেও আশীর্বাদী দিয়েছি। মহিমবাবু বললেন, ‘তোমার রিকশা এসেছে।' নীচে নেমে এলাম। রিকশায় উঠবার আগে মহিমবাবুকে নমস্কার করলাম। তিনি শুধু মুখের দিকে তাকালেন, কিছুই বললেন না। রিকশায় যখন উঠলাম, মহিমবাবু তখন রেণুর হাত নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন। বলে উঠলেন, 'ভাসতে ভাসতে যখনই ইচ্ছে হবে, এখানে এসে নোঙর কর।' চোখ ঝাপসা হয়ে এল আমার। সমুদ্রের দিকে ফিরে তাকালাম। শরৎকাল এসে পড়েছে। আকাশ আর সমুদ্র উজ্জ্বল নীলিমায় চিরস্পর্শহীন মুখোমুখি করে হাসছে।
সমরেশ বসু (১৯২৪-১৯৮৮) প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক। কালকূট ও ভ্রমর তার ছদ্মনাম। তার রচনায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, শ্রমজীবী মানুষের জীবন এবং যৌনতাসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সুনিপুণ বর্ণনা ফুটে ওঠে। ১৯৮০ সালে তিনি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। তার শৈশব কাটে বাংলাদেশের বিক্রমপুরে আর কৈশোর কাটে কলকাতার উপকণ্ঠ নৈহাটিতে। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতায় তার জীবন ছিল পরিপূর্ণ। এক সময় মাথায় ফেরি করে ডিম বেচতেন। বিচিত্র বিষয় এবং আঙ্গিকে নিত্য ও আমৃত্যু ক্রিয়াশীল লেখকের নাম সমরেশ বসু। দেবেশ রায় তাঁর মৃত্যুতে লেখা রচনাটির শিরোনামই দিয়েছিলেন, 'জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি লেখক এবং পেশাদার লেখক'। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইছাপুরের গান ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। ট্রেড ইউনিয়ন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। এ কারণে তাকে ১৯৪৯-৫০ সালে জেলও খাটতে হয়, জেলখানায় তিনি তার প্রথম উপন্যাস ‘উত্তরঙ্গ’ রচনা করেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। কালকূট মানে তীব্র বিষ। এটি তাঁর ছদ্মনাম। 'অমৃত কুম্ভের সন্ধানে', 'কোথায় পাব তারে' সহ অনেক উপন্যাস তিনি এ নামে লিখেছেন। বহমান সমাজ থেকে বাইরে গিয়ে একান্তে বেড়াতে ঘুরে বেরিয়েছেন আর সে অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন ভ্রমণধরমী উপন্যাস । হিংসা, মারামারি আর লোলুপতার বেড়াজালে আবদ্ধ থেকে যে জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল, সেখান থেকে বেড়িয়ে এসে অমৃতের সন্ধান করেছেন । তাই কালকূট নাম ধারণ করে হৃদয়ের তীব্র বিষকে সরিয়ে রেখে অমৃত মন্থন করেছেন উপন্যাসের মধ্য দিয়ে৷ “অমৃত বিষের পাত্রে”, “মন মেরামতের আশায়”, 'হারায়ে সেই মানুষে', 'তুষার শৃঙ্গের পদতলে' ইত্যাদি এই ধারার উপন্যাস। ছদ্ম নামে লেখা শাম্ব উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৮০ সালের আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন। লেখক হিসেবে সমরেশ আমৃত্যু যে লড়াই করেছেন তার কোনো তুলনা নেই। তাঁর নিজের জীবনই আরেক মহাকাব্যিক উপন্যাস। 'চিরসখা' নামের প্রায় ৫ লাখ শব্দের বিশাল উপন্যাসে সেই লড়াইকে স্মরণীয় করে রেখেছেন তারই পুত্র নবকুমার বসু। ছোটদের জন্যে সৃষ্ট গোয়েন্দা গোগোল অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। গোগোলকে নিয়ে বহু ছোটগল্প ও উপন্যাস লিখেছেন যা শিশুসাহিত্য হিসেবে সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গোগোলের দুটি কাহিনী চলচ্চিত্রায়িতও হয়।
Such an incredibly complex story! I had to buy it because there was a waiting list of 30+ at the local library for this book. Thrilled that I made the purchase
I read this book shortly after I got it and didn't just put it on my TBR shelf mainly because I saw it on Reese Witherspoon's bookclub September read. It was one of the best books I've read this year, and reminded me some of Kristen Hannah's The Great Alone.