'একাত্তর আমার গর্ব-একাত্তর আমার অহংকার-একাত্তর আমার বেঁচে থাকার আশ্বাস। আর এই একাত্তরই হলো আমার জীবনের সর্বহারা, সর্বনাশা। ... নিজের তাগিদেই সবাই হাজির যুদ্ধের ময়দানে। ঠিক তেমনি আমি এক হতভাগিনি নারী। যার নামের আগে মুক্তিযোদ্ধা না হয়ে হইছে বীরাঙ্গনা। পুরুষদের সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছি পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে প্রিয় মাতৃভূমিকে রক্ষা করার জন্য। তখন ভুলে গিয়েছিলাম আমি কে, কী আমার পরিচয়? শুধু জানতাম এদেশ শুধু আমার, আমার মায়ের ভাইয়ের বোনের আর বাবার। যে-দেশের জন্য আমি সব দিলাম, সে-দেশ আমার কাছ থেকে সব নিয়ে গেল।’জলময় হাওড়-বাঁওড়ে, দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে ট্রেনে, বাসে, মোটরসাইকেলে, ভ্যানে, নৌকায়, হেঁটে তার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে তিনি অটল ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। কারো কারো সাক্ষাৎকার নিতে তাকে ১০/১২ দফা ধারণা দিতে হয়েছে, কারণ বীরাঙ্গনা তো উঁচুতলার কেউ নয় যে সুসজ্জিত ড্রয়িংরুমে বসে সাক্ষাৎকার দেবে। তারা কেউ ছিন্নমূল, ভিখারিনি, উন্মাদ বা রোগাক্রান্ত। আবার কেউ কেউ তথ্য সংগ্রাহকের প্রতি দুর্ব্যবহার করেছে কেউবা অশ্রাব্য গালিগালাজ করতেও কুণ্ঠিত হয়নি। কোনো পুরুষ দ্বারা বীরাঙ্গনাদের একান্ত গোপনীয় অবমাননাকর তথ্যাদি সংগ্রহের দুঃসাধ্য কর্মটি সম্ভব হতো না সুরমা জাহিদ যেটি করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি অগ্রগামী পথিকের মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য। সময় দ্রুত যাচ্ছে— একাত্তরের অসম সাহসিনী বীরাঙ্গনারা একে একে হারিয়ে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে তিনি সহস্র বীরাঙ্গনার ইতিকথা জাতীয় কোষগ্রন্থ প্রণয়নে ব্রতী হবেন এমন প্রত্যাশা থাকল।‘বীরাঙ্গনা সমগ্র' বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ— স্বাধীনতা অর্জনের নেপথ্যে সংঘটিত অন্তর্ভেদী বেদনার মহাকাব্য যা মুক্তির অনির্বাণ আলোকোদ্ভাসে রক্তাক্ষরে লেখা হয়ে রইল।
সুরমা জাহিদ লেখালেখি শুরু করেন কবিতা দিয়ে। সাহিত্যের প্রায় সকল আঙ্গিনায় বিচরণ করছেন যা প্রকাশ পায় তাঁর কবিতায়, গল্পে, উপন্যাসে। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অন্যরকম চাওয়া’, অপর সৃষ্টি পাঠকপ্রেমীর নিকট সমাদৃত উপন্যাস ‘খণ্ডক’ । পরবর্তী প্রকাশ সহজ-সরল, প্রাঞ্জল ভাষায় রচিত উপন্যাস আজ বসন্তের দিন। আরাে প্রকাশিত হয় ছােটগল্প ‘না আর যাবাে না', গল্প ‘সােনার। পালঙ্কে আমি একা, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে। নির্যাতিত নারীদের নিয়ে গবেষণাধর্মী আলােড়িত প্রকাশনা 'বীরাঙ্গনাদের কথা। স্কুল জীবন থেকেই বাংলাদেশের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথে জড়িত থেকে সক্রিয় ভূমিকা রেখে। চলেছেন। বাংলাদেশের নারীদের বিভিন্ন সংকট, সংখ্যাতিময় অবস্থার প্রেক্ষাপটে লেখনীর দ্বারা হয়েছেন তিনি সােচ্চার। ইতােমধ্যে তিনি কুমারখালী সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, দক্ষিণ বাংলা সাহিত্য সাংস্কৃতিক পদক এবং কবি সুফিয়া কামাল সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছেন। সুরমা জাহিদের জন্ম ১৯৭০ সাল। জন্মস্থান : রাজাবাড়ি, রায়পুরা, নরসিংদী। বাবা : মরহুম আলফাজ উদ্দিন আহমেদ, মাতা : আম্বিয়া আক্তার। স্বামী : মােঃ জাহিদ হােসেন। ছেলে : মােঃ নাদির হােসেন লুই ও মেয়ে : নুর-এ-জান্নাত জুই। শিক্ষাজীবন শুরু করেন রায়পুরা উপজেলার জিরাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। তারপর মরজাল কাজী মােঃ বশির উচ্চ বিদ্যালয়, লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার গডিডমারী উচ্চ বিদ্যালয় শেষ করেন কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে।
Such an incredibly complex story! I had to buy it because there was a waiting list of 30+ at the local library for this book. Thrilled that I made the purchase
I read this book shortly after I got it and didn't just put it on my TBR shelf mainly because I saw it on Reese Witherspoon's bookclub September read. It was one of the best books I've read this year, and reminded me some of Kristen Hannah's The Great Alone.