কার্ল মার্কস
(৫ মে, ১৮১৮ – ১৪ মার্চ, ১৮৮৩) একজন জার্মান দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ, ইতিহাসবেত্তা, সমাজ বিজ্ঞানী, রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী। সমগ্র মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের একজন মার্ক্স। মার্ক্সের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রচনাগুলোর মাঝে রয়েছে তিন খণ্ডে রচিত পুঁজি এবং ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসের সাথে যৌথভাবে রচিত কমিউনিস্ট ইশতেহার (১৮৪৮)। সমাজ, অর্থনীতি, ও রাজনীতি সংক্রান্ত মার্ক্সের তত্ত্ব সমূহ মার্ক্সবাদ নামে পরিচিত। মার্ক্সের মতে, অদ্যাবধি পৃথিবীর ইতিহাস শ্রেণি সংগ্ৰামের ইতিহাস। শ্রেণি সংগ্রামের ভিতর দিয়ে মানব সমাজগুলো বিকশিত হচ্ছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় এই সংগ্রামের প্রকাশ ঘটে শাসক শ্রেণি (যারা একইসাথে রাষ্ট্র, ও কলকারখানা নিয়ন্ত্রণ করে) এবং শ্রমজীবী শ্রেণি (যাদের জীবিকার একমাত্র উপায় পুঁজিপতির কারখানায় ন্যূনতম মজুরির বিনিময়ে শ্রম বেঁচা), তাদের মাঝে। মার্ক্স বলেন যে, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে শ্রমিক শ্রেণি যে পরিমাণ নতুন মূল্যের সৃষ্টি করে তার ভগ্নাংশই মাত্র তারা মজুরি বাবদ পান, উদ্বৃত্ত সিংহভাগ অংশ পুঁজির মালিকগণ আত্মসাৎ করে ফেলেন। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ অনুসরণ করে মার্ক্স দাবি করেন যে পূর্বতন সমাজব্যবস্থা গুলোর মতো পুঁজিবাদও তার অন্তঃস্থ বিভেদ ও শ্রেণি সংগ্রামের দরুন ভেঙে পড়বে এবং সমাজতন্ত্রের জন্ম হবে। মার্ক্স মনে করেন, অস্থিতিশীল ও সংকট প্রবণ পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ক্রমাগত শ্রেণি সংগ্রামের ভিতর দিয়ে মজলুম শ্রমজীবী শ্রেণির মাঝে শ্রেণিচেতনার জন্ম হবে; যার ফলে তাদের মাঝে ঐক্য গড়ে উঠবে এবং এই ঐক্যবদ্ধ শ্রমজীবী শ্রেণি জালেম শাসক শ্রেণিকে ক্ষমতাচ্যুত করে শ্রেণিহীন কওমী সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলবে। মার্ক্স মনে করেন, বিদ্যমান পুঁজিবাদী জালেমী ব্যবস্থার অবসান করতে এবং নিজেদের মুক্তির খাতিরে মজলুম শ্রমজীবী শ্রেণি গুলোর ঐক্যবদ্ধ হয়ে সশস্ত্র বিপ্লবের বিকল্প নেই।