চৈতী রহমান
চৈতী রহমানের জন্ম মার্চ ১৯৮৭, ফরিদপুরে। বেড়ে ওঠা ঢাকার মনখারাপ করা অলিগলিতে। লেখাপড়া অর্থনীতি বিষয়ে ও পরবর্তীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়। চা তাঁর ভারি পছন্দ, ঠিক যেন হাঁস। এলিসের মতন খরগোশের গর্তে পড়ে যেতে পারলেই খুশি, বের হবেন গিয়ে এক্কেবারে মস্কোর ফুটপাথে রঙিন এক মাত্রুশকার পেট থেকে। বিশ্বাস করেন যে—বাড়িতে দুটো বর্ষাতি রাখা দরকার যাতে দুটি পরী বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে হাজির হলে তাদের সাহায্য করা যায়। বাপের কাছে তাঁর পাওয়া মন্ত্র ‘চরৈবেতি চরৈবেতি’ মানে ‘স্থির থেকো না, এগিয়ে চল’। কেজো পড়ালেখা আর রোজগেরে ব্যস্ততার মাঝেও বন্ধুর সাথে সবজে পাহাড়ে দাঁড়িয়ে ধলা পর্বত দেখতে ছুট দেওয়ার জন্য জামার আস্তিন গুটানোই থাকে সারাবছর। তাঁর বেড়ালছানার নাম—মিশকা। মিশকার লোম ছেয়ে শাদায় ছোপানো। তিনি ‘বড়োমানুষ’ হতে ভয় পান। কারণ বড়োরা কিছুই বুঝতে চায় না, কিছুই দেখতে চায় না। ঠিক ওই প্লেনের ডানা ভেঙে পড়ে যাওয়া পাইলট যেমন বলেছিলেন ‘ছোট্ট রাজপুত্র’ গল্পে। সেই দুর্ভাগা পাইলট ছোটোবেলায় এঁকেছিলেন এক বোয়া কন্সট্রিক্টর সাপ যে কিনা মাত্রই গিলে খেয়েছে এক হাতিকে, তাই ফোলা পেট নিয়ে পড়ে আছে ছয় মাস ধরে হজম করার জন্যে। আর বড়োরা কিছুতেই তা মানতে চাইছিল না। তারা কেবলই বলেছিল যে সে নাকি এঁকেছে একটা হ্যাট! মনের সব রঙ মনেই আটকে রেখে তাই সে নিজেও হয়ে উঠল একজন বড়োমানুষ। কার্যকারণ ছাড়া যে কিছুই করে না, টাকার অংকে না বুঝিয়ে বললে যে কিছুই বোঝে না—তেমন একজন বড়োমানুষ। তাঁর ভাষ্যমতে, আপাতদৃষ্টে ‘বড়োমানুষেরা’ যাকে সফলতা বলে মনে করে সেইরকম একটা দেখনসই নামডাক, খুব প্রতিযোগিতায় লড়ে যোগাড় করা গেলেই তা জীবনকে খুব অর্থবহ করে তুলবে—এমনটা সবার ক্ষেত্রে নাও হতে পারে। বরং আপাত ক্ষুদ্র কোনো ভালোবাসার কাজে নিজেকে উজাড় করে দিয়েও জীবনকে মঙ্গলময় আর অর্থবহ করা সম্ভব। যেহেতু জীবনের অর্থ একেকজনের কাছে একেকরকম।