আজাদ ছিল তার মায়ের একমাত্র সন্তান। আজাদের বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করায় বালক আজাদকে নিয়ে তার মা স্বামীর গৃহ-অর্থ-বিত্ত ত্যাগ করে আলাদা হয়ে যান। মা বড় কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া করান। আজাদ এমএ পাস করে। এই সময় দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। আজাদের বন্ধুরা যোগ দেয় ঢাকার আরবান গেরিলা দলে। আজাদ মাকে বলে, আমিও যুদ্ধে যাব। মা তাকে অনুমতি দেন। ছেলে যুদ্ধে যায়। ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট একরাতে ঢাকার অনেক ক'টা মুক্তিযোদ্ধা-নিবাসে হামলা চালায় পাকিস্তানী সৈন্যরা, আরো অনেকের সঙ্গে ধরা পড়ে রুমী, বদি, আলতাফ মাহমুদ, জুয়েল এবং আজাদ। আজাদের ওপর পাকিস্তানীরা প্রচণ্ড অত্যাচার চালিয়েও কথা বের করতে পারে না। তখন তার মাকে বলা হয়, ছেলে যদি সবার নাম-ধাম ইত্যাদি বলে দেয়, তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আজাদের মা ছেলের সঙ্গে দেখা করেন এবং বলেন, শক্ত হয়ে থেকো, কারো নাম বলে দিও না। আজাদ বলে, মা দুদিন ভাত খাই না, ভাত নিয়ে এসো। মা পরের দিন ভাত নিয়ে হাজির হন বন্দিশিবিরে, কিন্তু ছেলের দেখা আর মেলে না। আর কোনোদিনও ছেলে তাঁর ফিরে আসে নাই আর এই মা আর কোনোদিনও জীবনে ভাত খান নাই। যুদ্ধের ১৪ বছর পরে মা মারা যান, নিঃস্ব, রিক্ত- বেশে। মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে কবরে শায়িত করলে আকাশ থেকে ঝিরঝির করে ঝরতে থাকে বৃষ্টি।মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এই কাহিনীর সন্ধান পেয়ে আনিসুল হক বহুজনের সাক্ষাৎকার নিয়ে, বহু দলিল-দস্তাবেজ ঘেঁটে রচনা করেছেন অসামান্য এক উপন্যাস, জানাচ্ছেন এক অসমসাহসিকা মায়ের অবিশ্বাস্য কাহিনী। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, যতদিন স্বাধীনতা থাকবে, এই অমর মাকে ততদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হবে আমাদের।
Specification
Titel: | মা (সময়) |
---|---|
Author | আনিসুল হক |
Publication: | সময় প্রকাশন |
ISBN: | 984-458-422-1 |
Edition: | 2023 |
Number of Pages: | 320 |
Country: | Bangladesh |
Language: | Bangla - বাংলা |