রাশেদ খান মেননের ব্যক্তিজীবন ও রাজনীতি অবিচ্ছেদ্য। বরং পারিবারিক জীবনের চেয়ে রাজনীতিই তাঁকে বেশি টেনেছে। ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়া মানুষটির আত্মত্মজীবনী তাই ব্যক্তিজীবনের সমান্তরালে হয়ে উঠেছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কালপর্বের দলিল, রাজনৈতিক ইতিহাস। তাতে অবধারিতভাবে উঠে এসেছে ভাসানী, বঙ্গবন্ধুসহ গুরুত্বপূর্ণ সব চরিত্র, তাঁদের সঙ্গে মেননের স্মৃতি। ১৯৬২-র শিক্ষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিখ্যাত হয়ে ওঠা মেননের রয়েছে বর্ণাঢ্য পারিবারিক ঐতিহ্য। উদার সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তিনি বেড়ে উঠেছেন। এটা তাঁর মানস ও চেতনার জগৎকে পুষ্ট করেছে। বইটিতে এর ছাপ স্পষ্ট। মেননের পরিমিত রসবোধ ও প্রাঞ্জল ভাষা পাঠককে আনন্দ দেবে। তাঁর বর্ণনা স্বতঃস্ফূর্ত ও জীবন্ত, ফলে তা সহজেই পাঠককে একাত্ম করে। বইটি পাঠ করতে করতে সেই অগ্নিগর্ভ সময়ের রোমাঞ্চ পাঠককে ছুঁয়ে যাবে। রাজনীতি ও ইতিহাসের একনিষ্ঠ ছাত্র তো বটেই, এমনকি যারা থ্রিলার পড়ে আনন্দ পান তারাও বইটি পড়তে পারেন। সে সময়কার রাজনীতি, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সর্বোপরি ইতিহাস নিয়ে অনেক চমকপ্রদ ও নতুন তথ্য এ আত্মজীবনীতে বিধৃত হয়ে আছে। বইটির এক জায়গায় লেখক যথার্থই লিখেছেন, ‘এটা কেবল আত্মজীবনী নয়, ইতিহাসের অনুদ্ঘাটিত, অলিখিত এবং বহুলাংশে অস্বীকৃত অংশ। আশা করি পাঠক সেভাবেই নেবেন।”
আত্মগােপনে যাওয়ার কারণে এ দণ্ডাদেশ ভােগ করতে হয়নি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি করে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান করে মুক্ত স্বাধীন দেশে মুক্তজীবনে ফিরে আসেন তিনি। সেই বাংলাদেশেও এরশাদের সামরিক শাসনের বিরােধিতা করায় তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বন্দি থাকতে হয়। ছাত্রজীবনের পর মওলানা ভাসানীর হাত ধরে কৃষক আন্দোলন ও জাতীয় রাজনীতিতে তার প্রবেশ। ছাত্রজীবনেই গােপন কমিউনিস্ট পার্টির কাছে কমিউনিজমে দীক্ষা। কমিউনিস্ট আন্দোলনের মস্কোপিকিং বিভক্তিতে পিকিংপন্থীর কাতারে পড়ে যান। কিন্তু অচিরেই এ দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনকে স্বাধীনভাবে সংগঠিত করতে প্রথমে কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ববাংলা সমন্বয় কমিটি, বাংলাদেশ পরবর্তীতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (লেনিনবাদী), পরে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সংগঠিত করেন। পার্টির গােপন অবস্থায় প্রথমে ভাসানী ন্যাপের প্রচার সম্পাদক, পরে ইউপিপি’র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হিসেবে কাজ করেন। পার্টি সম্পূর্ণ প্রকাশ্যে এলে তিনি প্রথমে ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, পরে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি নির্বাচিত হন। কৃষক আন্দোলনের সফল সংগঠক রাশেদ খান মেনন মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে পাকশী, মহীপুর ও সন্তোষের ঐতিহাসিক কৃষক সম্মেলন ও সমাবেশের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন কৃষক সমিতির দপ্তর সম্পাদক ও পরে কৃষক মুক্তি সমিতির সভাপতি ছিলেন। রাজনীতির কারণে দু’বার তার জীবননাশের চেষ্টা হয়। দেশের মানুষের ভালােবাসায় জীবনে ফিরে এসে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। ১৯৭৯ ও ১৯৯১-এর নির্বাচনে তিনি দু'বার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং সংসদের পাবলিক এ্যাকাউন্টস কমিটি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেন। তার ছাত্রআন্দোলনের সহকর্মী লুচ্ছুননেসা খান বিউটি তার স্ত্রী কন্যা সুবর্ণা আফরিন খান, পুত্র আশিক রাশেদ খান।
Such an incredibly complex story! I had to buy it because there was a waiting list of 30+ at the local library for this book. Thrilled that I made the purchase
I read this book shortly after I got it and didn't just put it on my TBR shelf mainly because I saw it on Reese Witherspoon's bookclub September read. It was one of the best books I've read this year, and reminded me some of Kristen Hannah's The Great Alone.