শহীদুল্লা কায়সার
শহীদুল্লা কায়সার কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক, লেখক। ১৯২৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম আবু নাঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। পিতা মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ছিলেন ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও লেখক জহির রায়হান তাঁর অনুজ। শহীদুল্লা কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ (১৯৪৬) পাস করার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ শ্রেণিতে অধ্যয়ন করেন, কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। ১৯৫১ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা পালন করেন এবং ৩ জুন গ্রেফতার হয়ে প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি পুনরায় গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হন। ১৯৫৮ সালের ১৪ অক্টোবর সামরিক শাসক কর্তৃক তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন এবং প্রায় চার বছর কারাভোগের পর ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে মুক্তি লাভ করেন। ১৯৫৭ সালের শেষের দিকে ঢাকার সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকায় শহীদুল্লার সাংবাদিক জীবন শুরু। ১৯৬৩ সালে তিনি সংবাদ পত্রিকায় সহযোগী সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন। শহীদুল্লা কায়সারের প্রধান উপন্যাস সারেং বউ (১৯৬২)-এ মানুষ ও তার অস্তিত্বের সংগ্রামের কথা বর্ণিত হয়েছে। তাঁর কাম্য ছিল সুস্থ ও পরিশীলিত জীবনভিত্তিক একটি উন্নত সমাজ। সংশপ্তক (১৯৬৫), কৃষ্ণচূড়া মেঘ, তিমির বলয়, দিগন্তে ফুলের আগুন, সমুদ্র ও তৃষ্ণা, চন্দ্রভানের কন্যা, কবে পোহাবে বিভাবরী (অসমাপ্ত) তাঁর অন্যান্য উপন্যাস। রাজবন্দীর রোজনামচা (১৯৬২) ও পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ (১৯৬৬) তাঁর স্মৃতিকথা ও ভ্রমণবৃত্তান্ত । শহীদুল্লা সাহিত্যকর্মের জন্য আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬২) এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২) লাভ করেন । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পূর্ব মুহূর্তে ১৪ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার বাসভবন থেকে তিনি অপহৃত হন এবং আর ফিরে আসেননি ।