চিঠিগুলো পড়ি আর ভাবি কত যন্ত্রণা কত কষ্ট বুকে চেপে হাসিমুখে জীবনকে গ্রহণ করেছে বাবা, যে জীবন সবাই আলিঙ্গন করে না সহজে, সেই জীবন যে জীবন মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক মুক্তির জন্য অন্যের সুন্দর জীবনের জন্য উৎসর্গীত, নিজের ব্যক্তিগত আনন্দবেদনাকে ছাপিয়ে অন্যের আনন্দের উপলক্ষ্য হওয়ার মতো মানবিক সৌন্দর্য ও নির্মল জীবনবোধ কয়জনের হয়। তিনি ভালোবেসেছিলেন, নিজের অনিশ্চিত জীবনের সঙ্গে কাউকে আটকে রাখতে চাননি, তিনি তাঁর একটা লেখায় বলেছিলেন, 'নিজেকে অন্যের জীবনের সঙ্গে অযাচিতভাবে চাপিয়ে দেওয়ার মতো দৈন্যতা আমার নেই'। অর্থাৎ তিনি নিবিড়ভাবে ভালোবাসাকে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিলেন বটে, কিন্তু অনিশ্চিত জীবন অন্যের জন্য উৎসর্গকৃত জীবনে নীড় বাঁধার স্বপ্নে তিনি হোঁচট খেলেন, আমি তাঁর লেখা চিঠি পড়ি আর ভাবি তিনি এত ভালোবেসে চিঠিগুলো লিখেছেন সেই চিঠিগুলো তাঁর প্রেয়সীর কাছে আর পৌঁছয়নি।জীবনের কী নির্মম সত্য আজ সেই চিঠিগুলো তাঁর সন্তান হিসেবে আমাদের বেঁচে থাকার খোরাক। এই চিঠিতে যেমন প্রেমিক শহীদুল্লা কায়সারকে পাই, তেমনি একজন অসাধারণ মানবিক মানুষ, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক ও এক সাধারণ মানুষকে পাই, মেয়ে হিসেবে যখন আমি চিঠিগুলো পড়ি আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারি না কষ্টে, কত কষ্ট কত শূন্যতা কত আকুতি ছিল এই মানুষটির, জীবনের একফালি আনন্দ একফালি সুখের জন্য। আমি ডায়েরিগুলো পড়ি আর নিজেকে আবিষ্কার করি, বাবাকে আবিষ্কার করি, আমার একাকিত্বের সঙ্গী এই লেখাগুলো, আজকে শীতের সন্ধ্যায় বসে যখন লিখছি মনে হচ্ছে আমি শহীদুল্লা কায়সারকে স্পর্শ করতে পারছি, কিন্তু তাও ক্ষণিকের জন্য।যেদিন সন্ধ্যায় তারিক সুজাত ভাইকে ডায়েরিগুলো দিয়ে দিলাম মনের ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো, এ এক আজব অনুভূতি, এই অনুভূতি শূন্যতার কষ্টের যন্ত্রণার, আমার মনে আছে যখন বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর প্রকাশনা অনুষ্ঠানটি টেলিভিশনে দেখছিলাম বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা একইভাবে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর ডায়েরিগুলো যখন তিনি এবং শেখ রেহানা বেবি মওদুদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন উনার ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে, আমারও একইভাবে ভেতরটা শূন্যতায় হাহাকার করে ওঠে, কান্না চেপে রাখতে পারছিলাম না। তারিক ভাইকে দিয়ে বললাম, এই আমাদের শেষ সম্বল, আমার বিশ্বাস ছিল তারিক ভাই যত্ন করে কাজটি করবেন।
শহীদুল্লা কায়সার কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক, লেখক। ১৯২৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম আবু নাঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। পিতা মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ছিলেন ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও লেখক জহির রায়হান তাঁর অনুজ।
শহীদুল্লা কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ (১৯৪৬) পাস করার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ শ্রেণিতে অধ্যয়ন করেন, কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। ১৯৫১ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা পালন করেন এবং ৩ জুন গ্রেফতার হয়ে প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি পুনরায় গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হন। ১৯৫৮ সালের ১৪ অক্টোবর সামরিক শাসক কর্তৃক তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন এবং প্রায় চার বছর কারাভোগের পর ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে মুক্তি লাভ করেন।
১৯৫৭ সালের শেষের দিকে ঢাকার সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকায় শহীদুল্লার সাংবাদিক জীবন শুরু। ১৯৬৩ সালে তিনি সংবাদ পত্রিকায় সহযোগী সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন।
শহীদুল্লা কায়সারের প্রধান উপন্যাস সারেং বউ (১৯৬২)-এ মানুষ ও তার অস্তিত্বের সংগ্রামের কথা বর্ণিত হয়েছে। তাঁর কাম্য ছিল সুস্থ ও পরিশীলিত জীবনভিত্তিক একটি উন্নত সমাজ। সংশপ্তক (১৯৬৫), কৃষ্ণচূড়া মেঘ, তিমির বলয়, দিগন্তে ফুলের আগুন, সমুদ্র ও তৃষ্ণা, চন্দ্রভানের কন্যা, কবে পোহাবে বিভাবরী (অসমাপ্ত) তাঁর অন্যান্য উপন্যাস। রাজবন্দীর রোজনামচা (১৯৬২) ও পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ (১৯৬৬) তাঁর স্মৃতিকথা ও ভ্রমণবৃত্তান্ত ।
শহীদুল্লা সাহিত্যকর্মের জন্য আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬২) এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২) লাভ করেন । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পূর্ব মুহূর্তে ১৪ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার বাসভবন থেকে তিনি অপহৃত হন এবং আর ফিরে আসেননি ।
Such an incredibly complex story! I had to buy it because there was a waiting list of 30+ at the local library for this book. Thrilled that I made the purchase
I read this book shortly after I got it and didn't just put it on my TBR shelf mainly because I saw it on Reese Witherspoon's bookclub September read. It was one of the best books I've read this year, and reminded me some of Kristen Hannah's The Great Alone.